মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার :
আটদিন পার হয়ে গেলেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা মাথা গোঁজার ঠাঁই করতে না পেরে খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত আগুনে ভস্মীভূত হওয়া তাদের জিনিসপত্র সরানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। চতুর্দিকে পোড়ে যাওয়া আসবাবপত্রের দুর্গন্ধ এখনও দূর হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলোর মালিকদের চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। গতকাল সরেজমিন সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের টাইলা গ্রামে গত ১৭ জুন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টায় সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এমন চিত্র দেখা যায়। তবে শীঘ্রই সরকারের দেয়া সহযোগিতাসহ দার দেনা করে নতুন ঘর তৈরির উদ্যোগ নেবেন বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মরম আলীর ছেলে মাওলানা গুলজার আহমদের স্ত্রী রাতের খাবার শেষে তরকারি গরম করতে গ্যাসের চুলায় আগুন ধরাতে যান। এমন সময় তাতে বিস্ফোরণ ঘটে। প্রাথমিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় দ্রুত পাশের ঘরগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া প্রত্যেক ঘরেই গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল। আগুনের ভয়াবহতার কারণে প্রথমদিকে কেউ কাছে যেতে পারছিলেন না। পরে আশপাশের লোকজন এসে আগুন নেভাতে চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে দিরাই ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জে শান্তিগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে ঘরের যাবতীয় মালামাল ভস্মীভূত হয়ে যায়। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় কোটি টাকার উপরে হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে রশদ আলীর (৭৮) নগদ ৬৫ হাজার টাকা, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র, সোনা গহনাসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত মরম আলীর ছেলে সাজিদুর রহমান (৫৮), মাওলানা গুলজার আহমদ (৫০) ও বকুল মিয়ার (৪২) নগদ ৩০ হাজার টাকা, ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র, সোনা গহনা মিলে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া মৃত ছমেদ উল্লাহর ছেলে মসজিদের মুতাওয়াল্লী হুঁশিয়ার আলী (৬৫) ও পসন্দর আলীর (৬০) নগদ আড়াই লাখ টাকা, মসজিদের ৭৫ হাজার টাকা, সোনা ও আসবাবপত্রসহ প্রায় ৫০ লাখ টাকা, মৃত জহুর উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমান (৫৮) ধান ৫০ মণ, আসবাবপত্রসহ প্রায় আড়াই লাখ টাকা, মৃত আফতর উল্লাহর ছেলে আব্দুল মতিন (৫৯) আড়াইশত মণ ধান, নগদ দুই লাখ, সোনা ও আসবাবপত্রসহ প্রায় ১২ লাখ টাকা, ওয়াকিব মিয়া (৪১) আড়াইশত মণ ধান, সোনা ও আসবাবপত্রসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা, আব্দুশ শহিদের (৩৫) মোট আড়াই লাখ টাকা, মৃত হুসমত উল্লাহর ছেলে আব্দুল হাসিম (৩৪) ও আব্দুল মোমিনের (৩২) প্রায় ১০ লাখ টাকা, মৃত চান্দ আলীর ছেলে ক্বারী আলফাজ উদ্দিনের (৪৯) মোট আড়াই লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পেয়ে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান নূর হোসেন, নির্বাহী অফিসার আনোয়ারুজ্জামান, পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শফিকুল ইসলামসহ এলাকায় মানুষ দেখতে আসেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রতি পরিবারকে ৩ বান টিন ও ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়।